পুরো পৃথিবী এখন ইন্টারনেট নির্ভর। মার্কেটিং জগতে ই-মার্কেটিং একবিংশ শতাব্দীর আশ্চর্যময় আবিষ্কার। করোনা মহামারির কারণে যখন পুরো বিশ্ব থমকে O4P গিয়েছিল তখন ই-মার্কেটিং আশীর্বাদ হিসেবে এসেছিল। ফলে মানুষ ঘরে বসেই তার ক্রয়-বিক্রয়ের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। ই-মার্কেটিং O পে-পার ক্লিক মানুষের জীবনকে করে তুলেছে স্বাচ্ছন্দ্যময় ও আনন্দময়। এটি সুরক্ষামূলক সহজ কেনা-বেচার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে বিবেচিত। সর্বোপরি ই-মার্কেটিং বিশ্বব্যাপী সহজ কেনা-বেচার এক সম্ভাবনাময় দুয়ার উন্মোচন করেছে।
রুমা বাংলাদেশের রাজধানীর একটি স্বনামধন্য কলেজে পড়ালেখা করছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশে লক-ডাউন চলছিল। বাসার বাইরে যাওয়া, এমনকি বাসার গেইট থেকে বের হওয়াও অনেক এলাকার মানুষের জন্য নিষেধ ছিল। কারিগরি জ্ঞান থাকায় মিস রুমা অনলাইন মার্কেটিং তথা ই-মার্কেটিং কার্যক্রম করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলো। বাসায় বসেই ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে রুমা প্রথমে একটি ফেসবুক পেইজ ওপেন করলো। ফেসবুক ফ্রেন্ডদের ছাড়াও সকলের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য রুমা তার পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য ফেসবুক পেজের 'লাইভ' অপশনে বিভিন্ন পণ্যের গুণাগুণ তুলে ধরলো । শুরুতে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনরা রুমার কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করলেও পরবর্তীতে ফেসবুক লাইভের কারণে অপরিচিত অনেকেই পণ্য ক্রয়ের অর্ডার দিতে লাগলো। এতে করে রুমার পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির পাশাপাশি রুমার পরিচিতিও বাড়তে থাকল । বর্তমানে রুমা একজন সুপরিচিত মুখ ও বড় মাপের ই-মার্কেটার ।
ওপরের ছবিগুলোর দিকে খেয়াল করো। তোমাদের অনেকেই এই ছবিগুলো সম্পর্কে ধারণা অর্জন করলেও এগুলোর ব্যবহারে অভ্যস্ত নও। অথচ একসময় এগুলোই ছিল সবচেয়ে আধুনিক ও স্মার্ট মাধ্যম। তখন বর্তমান সময়ের ইন্টারনেট লাইন ছিল না, এন্ড্রয়েড মোবাইল বা ল্যাপটপ ছিল না। তথাপিও একদেশের মানুষ ওপরের মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে বিশ্বের অন্যান্য দেশের খবর জানার সুযোগ পেত, নতুন পণ্যের খবর পেত। আর এসব মিডিয়া তথা রেডিও, টেলিভিশন, টেপ রেকর্ডার, সংবাদপত্র, বিলবোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে অফলাইনে যে বাজারজাতকরণ কার্যক্রম পরিচালিত হতো তাকেই ট্রেডিশনাল মার্কেটিং বলে।
অফলাইন চ্যানেল ব্যবহার করে অভীষ্ট ক্রেতাদের নিকট পণ্যের তথ্য পৌঁছানোর প্রক্রিয়াকে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং বলে। অন্যভাবে বলতে গেলে, যে প্রক্রিয়ায় বাজারজাতকারীরা প্রিন্ট মিডিয়া ও ব্রডকাস্ট মিডিয়া ব্যবহার করে ক্রেতাদের নিকট পৌঁছানোর চেষ্টা করে তাকে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং বলে। সর্বোপরি, ট্রেডিশনাল মার্কেটিং হলো এমন ধরনের কার্যক্রম যেখানে সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদির মাধ্যমে ক্রেতাদেরকে বিভিন্ন পণ্য বা সেবা বিষয়ে অবগত করা হয়।
জেনে রাখো ■ ট্রেডিশনাল মার্কেটিং প্রসঙ্গে Hitesh Bhasin বলেন, "Traditional marketing is a type of marketing where marketers use traditional platforms such as print media and broadcast media etc." (অর্থাৎ, ট্রেডিশনাল মার্কেটিং হলো এমন এক ধরনের মার্কেটিং যেখানে মার্কেটারগণ বিভিন্ন প্রথাগত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন। যেমন: প্রিন্ট মিডিয়া, ব্রডকাস্ট মিডিয়া।) |
---|
ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে সম্পূর্ণভাবে অফলাইনে যে মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে থাকে তাকেই ট্রেডিশনাল মার্কেটিং বলে।
উল্লিখিত লোগোগুলোর দিকে মনোযোগ সহকারে খেয়াল করো। সবগুলোর সাথেই তোমরা পরিচিত। ইন্টারনেট জগতে ব্যবহৃত জনপ্রিয় লোগো এগুলো ।
বর্তমান যুগ হলো ইন্টারনেটের যুগ। পুরো পৃথিবী এখন তোমার হাতের মুঠোয়। ঘরে বসেই অনলাইনে বা ইলেকট্রনিক উপায়ে তুমি পৃথিবীর সব খবর জানতে পারছো। এমনকি মোবাইলে ইন্টারনেট ডেটা কিনে যখন-তখন, যেখানে-সেখানে তুমি ইন্টারনেট অন করে কোথায় কী হচ্ছে তা জানার সুযোগ পাচ্ছো।
আর এ কথাগুলো বলে তোমাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলো তুমি কোন সময়ে বসবাস করছো, বা কোন সময়ে তুমি পৃথিবীতে এসেছো তা অনুধাবনের জন্য । এবার চলো আমরা জেনে নিই ই-মার্কেটিং কী?
সহজ ভাষায় ই-মার্কেটিং (বা ইলেকট্রনিক মার্কেটিং) বলতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত মার্কেটিংকে বোঝায়। তাই বলা যায়, “E-marketing refers to the marketing conducted over the internet.”
ই-মার্কেটিং আবার ইন্টারনেট মার্কেটিং, ওয়েব মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং বা অনলাইন মার্কেটিং হিসেবেও পরিচিত। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, ই-মার্কেটিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্মার্টফোন, ডিভাইস, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে অভীষ্ট ক্রেতাদের নিকট পণ্য বা সেবা পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়।
বর্তমান সময়ে ই-মার্কেটিং এর কার্যকারিতা এত বেশি যে, বাজারজাতকারীগণ দ্রুত এবং সহজ উপায়ে বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের নিকট পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। এজন্য ফেসবুক মার্কেটিং থেকে শুরু করে ইউটিউব মার্কেটিং, টুইটার মার্কেটিং ইত্যাদি আজ সকলের কাছে জনপ্রিয় মাধ্যম।
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ায় লাভের উদ্দেশ্যে অফলাইনে বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করা হয়। তাই বলা হয়েছে, "Traditional marketing is the process of fulfilling the target audience's needs using offline channels and making a profit out of it." ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর কতিপয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. অফলাইন চ্যানেল (Offline channels) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি এক ধরনের অফলাইন মার্কেটিং কার্যক্রম। এক্ষেত্রে ডিজিটাল চ্যানেলগুলো কোনোভাবেই জড়িত নয়। অর্থাৎ, ইন্টারনেট ব্যবহার করে মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না।
২. মজবুত সম্পর্ক (Strong relationships ) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং- এর আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন ধরনের ক্রেতা বা পক্ষের সাথে মজবুত সম্পর্ক তৈরি করা। কেননা এক্ষেত্রে সশরীরে ক্রেতাদের নিকট পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে। তাদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করে তাদের চাহিদা জানার সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি ট্রেডিশনাল মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক তৈরি হয়।
৩. কম বাজার বিভক্তিকরণ (Less market segmentation) : সাধারণত ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এ ব্যবসায়ের আওতা সীমিত হয়ে থাকে। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী অনলাইন মার্কেটিং-এর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের আওতা অনেক বড় হয়। ব্যবসায়ের আওতা সীমাবদ্ধ থাকে বলে তুলনামূলক কম বিভক্তিকরণ করতে হয়।
৪. অধিক বিশ্বাসযোগ্য ( More reliable): ক্রেতারা সাধারণত ট্রেডিশনাল মার্কেটিংকে বিশ্বাসযোগ্য মার্কেটিং পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করে। প্রতারণা আর জালিয়াতির মাত্রা কম থাকায় সাধারণ মানুষ ট্রেডিশনাল মার্কেটিংকে অধিক হারে বিশ্বাস করে।
৫. উৎকৃষ্ট ভ্যালু প্রদান (Providing better value): ট্রেডিশনাল মার্কেটিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ক্রেতাদেরকে উৎকৃষ্ট ভ্যালু প্রদান করা সহজ হয়। যেহেতু এ ধরনের মার্কেটিং পদ্ধতিতে সরাসরি সম্পর্ক তৈরি হয়। তাই ক্রেতারা বিক্রেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে।
৬. অধিক ক্রেতা আয়ত্তকরণ (Capturing more customers or audience ) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং- এর একটি কৌশল হলো জনসংখ্যার বৃহৎ গ্রুপ বা দলের কাছে বার্তা পৌঁছানোর ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করা। শহর কিংবা গ্রাম সব স্থানের লোকজন ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর সাথে পরিচিত। তাই এই পদ্ধতিতে বেশি ক্রেতা আকর্ষণ করা যায়।
৭. মাধ্যমের ব্যবহার (Use of medium) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এ যেসকল মাধ্যম ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে বিলবোর্ড, রেডিও, টেলিভিশন, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র অন্যতম।
৮. খরচ (Cost): ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর খরচ সাধারণত ডিজিটাল মার্কেটিং-এর খরচের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
ওয়েব মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ইন্টারনেট মার্কেটিং এবং অনলাইন মার্কেটিং-এর সমার্থক বা Synonym হলো ই-মার্কেটিং। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বাজারজাতকরণই হলো ই-মার্কেটিং। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ই-মার্কেটিং পুরো বিশ্বে ব্যবসায় বাণিজ্যের ধরনকে ইতিবাচকভাবে বদলে দিয়েছে। ই- মার্কেটিং-এর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-
১. খরচ কম (Low cost) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর চেয়ে ই-মার্কেটিং এর খরচ অত্যন্ত কম। খুব অল্প খরচে ই-মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় বিশ্বের যেকোনো জায়গায় যেকোনো পণ্য বা সেবার খবর পৌঁছে দেওয়া যায়। যেমন: কোনো ওয়েবসাইটে পণ্যের বিজ্ঞাপন দিলে তা যেকোনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যেকোনো জায়গা থেকে দেখতে পারে।
২. ২৪/৭/৩৬৫ অ্যাপ্রোচ ( 24/7/365 Approach): ই-মার্কেটিং-এর কার্যক্রম বছরব্যাপী (৩৬৫ দিন) সবসময় অর্থাৎ সপ্তাহের প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা হিসেবে চলমান থাকে। কেউ অসুস্থ থাকা অবস্থায় এমনকি ঘুমন্ত থাকা অবস্থাতেও এই ই-মার্কেটিং কার্যক্রম চলমান থাকতে পারে।
৩. বিনিয়োগ থেকে আয় ( Return on investment): ই-মার্কেটিং এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর বিনিয়োগ থেকে আয় যাচাই করা সহজ। যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছেন তারা সহজেই "infusionsoft"-এর মাধ্যমে তাদের টার্নওভার রেট চেক করতে পারেন। বিভিন্ন ভিডিওর ভিউ, ই-মেইল ওপেন এবং প্রতি লিংকের ওপর ক্লিক বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এর ফলে ই-মার্কেটিং কতটুকু সফল হচ্ছে তাও জানা যায় ।
৪. ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া (Customers response) : ই-মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়। কারা পণ্যটি পছন্দ করছে বা কারা পণ্যটি ক্রয়ে আগ্রহী তাও সহজেই জানা যায়।
৫. বিশ্বব্যাপী সুযোগ (Global opportunity): ই-মার্কেটিং কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী প্রসারিত। বিশ্বের সকল দেশের অভীষ্ট ক্রেতা নির্বাচন করে পণ্য বা সেবার বাজারজাতকরণ করা যায়।
৬. সহজ কার্যক্রম (Easy activities): ই-মার্কেটিং এর কার্যক্রম অত্যন্ত সহজ। যে কেউ সহজ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের ক্ষেত্রেই ই-মার্কেটিং অত্যন্ত সহজ।
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর প্রধান চ্যানেলগুলো হলো— টেলিমার্কেটিং, ব্রডকাস্ট, সরাসরি মেইল ও প্রিন্ট মিডিয়া। নিচে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. স্থানীয় দর্শকদের নিকট পৌঁছানো (Reaching local audience): স্থানীয় লোকদের কাছে পণ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এক্ষেত্রে রেডিও-টেলিভিশন হলো সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মাধ্যম। এর মাধ্যমে দ্রুত ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো যায় অর্থাৎ, ক্রেতাদেরকে পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জানানো যায়।
২. পরিচিত মার্কেটিং এর ধরন (Familiar marketing mode ) : বর্তমানে ব্যবহৃত খুব পরিচিত একটি মার্কেটিং মোড বা ধরন হলো টেলিভিশন। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে টেলিভিশন খুব কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আর টেলিভিশনের দর্শক সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। যেকোনো পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ক্রেতাদের নিকট ধারণা পৌঁছে দিতে টেলিভিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি (Builds credibility): অনলাইন বিজ্ঞাপনের চেয়ে টিভিতে দেখে বা সরাসরি পণ্য সম্পর্কে জানতে পারলে ক্রেতাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। যেকোনো ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের চেয়ে প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতি গ্রাহকদের বিশ্বাসযোগ্যতা বেশি হয়ে থাকে।
৪. ডাইরেক্ট ই-মেইল (Direct e-mail): এ পদ্ধতিতে যেকোনো কিছুর অফার প্রদানে ক্রেতাদেরকে সরাসরি ই-মেইল করে জানানো হয়। এতে করে ক্রেতারা নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণভাবে এবং অফারকৃত কোম্পানির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।
৫. ঝুঁকি কম (Less risk): ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এ জালিয়াতি ও প্রতারণার মাত্রা ততটা বেশি নয়। তাই এক্ষেত্রে ঝুঁকির পারিমাণও কম।
৬. উচ্চ সফলতার হার (High success rate) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এ উচ্চ সফলতার হার অত্যধিক। কেননা এটি ইতোমধ্যে পরীক্ষিত পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হয়েছেন ।
৭. নতুন দর্শক তৈরি (Creating new audience ) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং- এ বিভিন্ন বিলবোর্ড, রেডিও, টেলিভিশন, সরাসরি মেইল ইত্যাদি মাধ্যমে নতুন নতুন দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা সম্ভব।
১. অধিক ব্যয়বহুল (More expensive ) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর সবচেয়ে বড় সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা হলো অধিক খরচ। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিতে অনেক টাকা খরচ হয়ে থাকে। যেমন: টেলিভিশনে কোনো খবরের পূর্বে ৬০ সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ হয় প্রায় ৪২,০০০ টাকা।
২. সীমিত সংখ্যক দর্শক (Limited number of audience): ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী সম্ভব নয়। তাই ক্রেতা ও দর্শকের সংখ্যাও কম।
৩. কর্মসম্পাদন পরিমাপযোগ্য নয় (Performance is not measurable ) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এ বিভিন্ন বিষয়ের ডেটা কালেকশন করা অত্যন্ত কঠিন। তাই এই মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মাধ্যমে দেওয়া বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা পরিমাপ করা সম্ভব নয়।
৪. ক্রেতাকেন্দ্রিকতা সম্ভব নয় (Customization is not possible ) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এ ক্রেতাদের চাহিদা ও প্রয়োজন সম্পর্কে তেমন জানার সুযোগ নেই। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেখেই একজন দর্শক আসলেই বুঝতে পারবে না যে পণ্যটি কেমন। তাছাড়া ট্রেডিশনাল মার্কেটিং ক্রেতাদের জন্য আলাদা আলাদা পণ্য উৎপাদন ও প্যাকেজিং করা সম্ভব নয়।
৫. কম তথ্যপূর্ণ মাধ্যম ( Less informative medium) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো কম তথ্যপূর্ণ মাধ্যম। যেমন- টেলিভিশনের অল্প সময়ের বিজ্ঞাপনে পণ্যের ধরন, রং, মূল্য, দরকষাকষির সুযোগ সবকিছু তুলে ধরা সম্ভব নয়। তাই ক্রেতারা পণ্য সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পায় না ।
৬. অনাগ্রহ (Dirinterest) : বর্তমান ডিজিটাল যুগে এসে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর প্রতি মানুষ দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এখন অনেকেই আর টিভির সামনে খুব একটা বসেন না। সবকিছু এখন তাদের হাতের মুঠোয়। টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মাঝে বার বার বিজ্ঞাপন দেখতে হয় বলে এখন কেউ একটি নাটক দেখতে চাইলেও ইউটিউব থেকে দেখে।
ই-মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় ইন্টারনেট বা অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পণ্য ও সেবা উপস্থাপন করা হয়। ক্রেতাদেরকে সর্বোচ্চ ভ্যালু প্রদানই ই-মার্কেটিং-এর প্রধান উদ্দেশ্য। নিচে ই-মার্কেটিং-এর সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা করা হলো-
১. বিশ্বব্যাপী পৌঁছানো (Global reach): ই-মার্কেটিং এর সবচেয়ে সুবিধার বিষয়টি হলো বিশ্বব্যাপী ক্রেতা বা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো। ই- মার্কেটিং এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যার সহায়তায় আমরা ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পণ্যের প্রচার করতে পারি।
২. কম খরচ (Lower cost) : ই-মার্কেটিং জনপ্রিয় হবার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এর খরচ খুবই কম। অল্প খরচ করে যে কেউ এই মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। খুব অল্প খরচ করেই বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর একটি অনন্য উপায় হলো ই-মার্কেটিং।
৩. পরিমাপযোগ্য (Measurable): বিভিন্ন ওয়েব এনালাইটিক্স এবং অনলাইন মেট্রিক্স টুলস ব্যবহার করে সহজেই জানা যায় যে কোম্পানি বা ব্যক্তি কর্তৃক ক্যাম্পেইন কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে। বিশ্বের কতজন মানুষ পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপনটা দেখেছে তা সহজেই তাৎক্ষণিক জানা যায়।
৪. ব্যক্তিগতকরণ (Personalization) : ই-মার্কেটিং-এর আরেকটি সুবিধার দিক হলো ব্যক্তিগতকরণ। কেননা এ প্রক্রিয়ায় কারা পণ্যটি দেখছে, কারা পণ্যটি পেতে আগ্রহী ইত্যাদি বুঝে সে অনুযায়ী তাদের সাথে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা যায়। ই-মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় গ্রাহকদের একটি ডেটাবেজ থাকে, যা ওয়েবসাইটের সাথে সংযুক্ত। এর ফলে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করা মাত্রই গ্রাহকদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়।
৫. গ্রাহকদের সাথে সহজে কানেক্টিভিটি (Easy to connect with customer) : ই-মার্কেটিং-এ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেই গ্রাহকদের সাথে কানেক্ট হয়ে তাদের বিভিন্ন মতামত গ্রহণ করা যায়।
৬. ঝুঁকি কম (Less risky): ই-মার্কেটিং-এর ঝুঁকি অত্যন্ত কম। কেননা এক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ কম। আর খরচের পরিমাণ কম হওয়ায় ঝুঁকির পরিমাণও কম হয়ে থাকে।
৭. দ্রুত প্রতিক্রিয়া (Fast response): ই-মার্কেটিং-এর সফলতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো গ্রাহকদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। দূরত্ব যতই হোক না কেন, মনে হবে একজন আরেকজনের খুব কাছাকাছি বসে পণ্যের কেনা- বেচা করছেন ।
যার ফলে বর্তমানে বিশ্বকে বলা হয় গ্লোবাল ভিলেজ। ওপরে উল্লিখিত সুবিধাসমূহ ছাড়াও ই-মার্কেটিং-এর আরও সুবিধা বিদ্যমান। যেমন- সহজ তথ্য সংগ্রহ ও মূল্যায়ন, অধিক আন্তঃসংযোগ, মত প্রকাশের সুযোগ, সহজ প্রবেশযোগ্যতা ইত্যাদি।
১. বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা (Global competition): ই-মার্কেটিং যেহেতু বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম সেহেতু এর প্রতিযোগিতাও বিশ্বব্যাপী। প্রায় একই শ্রেণির দর্শক বা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে বিশ্বব্যাপী চলছে অনলাইন প্রতিযোগিতা।
২. দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার অভাব (Lack of skills and experience): অনলাইন বা ডিজিটাল মার্কেটিং-এর ক্ষেত্রে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হতে হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না এমন কারো দ্বারা ই-মার্কেটিং করা সম্ভব না। ডিজিটাল বা অনলাইন মার্কেটিং-এর সফলতা অর্জন তখনই সম্ভব হয় যখন মালিক ও কর্মচারীরা দক্ষ হয়। অন্যথায়, কোনোভাবেই তারা বাজারে টিকে থাকতে পারবে না।
৩. প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা (Reliance on technology): ই-মার্কেটিং-এর আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো— এ কার্যক্রম পুরোটাই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। যেমন- মোবাইল, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট ইত্যাদি।
৪. সময় ব্যয় (Time consuming): ই-মার্কেটিং-এর বড় সমস্যা হলো এতে সময়ের খুব অপচয় হয়। বিভিন্ন কারণে যেমন- একটি লিংককে প্রবেশ করলে আবার আরেকটি লিংককে প্রবেশ করার আগ্রহ তৈরি হয়। খুব প্রয়োজন নেই তারপরও বিভিন্ন সাইট ঘুরে ঘুরে অনেকেই সময়ের অপচয় ঘটায়।
৫. নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা ইস্যু (Privacy and security issues): প্রযুক্তির যুগে ক্রেতাদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার বিষয়টি এখন প্রধান ইস্যু হয়ে ওঠেছে। হ্যাকিংসহ নানাবিধ কারণ রয়েছে যেগুলোর কারণে ক্রেতারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
৬. রক্ষণাবেক্ষণ খরচ (Maintainance cost) : ই-মার্কেটিং-এর সার্বিক খরচ কম হলেও এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি। বিভিন্ন টুলস বা সরঞ্জামাদি ক্রয়ে এবং তা রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হয়ে থাকে। যেমন- ল্যাপটপ ক্রয় এবং তা নষ্ট হয়ে গেলে রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম নয়।
ট্রেডিশনাল চ্যানেল তথা বিলবোর্ড, প্রিন্টেড মিডিয়া, রেডিও ইতাদি ব্যবহারের মাধ্যমে যে মার্কেটিং কার্যক্রম সম্পন্ন করা হত তাকে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং বলে। নিচে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর ধরনসমূহ উল্লেখ করে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. ডাইরেক্ট মেইল ( Direct mail): বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপক কর্তৃক অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ক্রেতার কাছে কোনো পণ্যের আহ্বান, ঘোষণা, স্মরণ করিয়ে দেওয়া, প্রমোশনমূলক কোনো বার্তা ক্রেতার ঠিকানায় চিঠি দিয়ে প্রেরণ করা হলে, তাকে সরাসরি চিঠি বাজারজাতকরণ (Direct Mail Marketing) বলে। উপযুক্ত নির্বাচিত ক্রেতাদের কাছে চিঠি, ক্যাটালগ, বিজ্ঞাপন, নমুনা, বিবরণীপত্র প্রভৃতি চিঠির মাধ্যমে ক্রেতার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ডাইরেক্ট মেইল অ্যাসোসিয়েশনের (Direct Mail Association) এর মতে, ডাইরেক্ট মেইল বাবদ ১ ডলার ব্যয় হলে সেখান থেকে আয় হয় ১২.৫৭ ডলার। একজনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ডাইরেক্ট মেইল খুবই উপযোগী একটি মাধ্যম। অত্যন্ত লক্ষ্যস্থিত ও নির্বাচিত ব্যক্তিমুখী, নমনীয় এবং সহজে পরিমাপযোগ্য পদ্ধতিটি হলো ডাইরেক্ট মেইল মার্কেটিং (Direct Mail Marketing)।
২. টেলিমার্কেটিং (Telemarketing) : টেলিফোন নম্বর ব্যবহার করে পণ্য বা পণ্যের দাম বা প্রমোশনমূলক কোনো বার্তা ব্যক্তিগত ক্রেতা বা ব্যবসায়িক ক্রেতার কাছে উপস্থাপন করাকে টেলিমার্কেটিং বলে। একজন ব্যবসায়িক ক্রেতা অর্থাৎ, এক ব্যবসায়ী আরেকজন ব্যবসায়ীকে পণ্য সম্পর্কে জানাতে টেলিমার্কেটিং করে। এটাকে ব্যবসায় থেকে ব্যবসায় (Business to Business ) টেলিমার্কেটিং বলে। টেলিমার্কেটিং দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :
ক. অন্তর্মুখী টেলিমার্কেটিং (Inbound telemarketing): ক্রেতাসাধারণ আগ্রহী এবং উদ্যোগী হয়ে যখন পণ্য বা সেবা কেনার জন্য টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, তখন তাকে অন্তর্মুখী টেলিমার্কেটিং বলে।
খ. বহির্মুখী টেলিমার্কেটিং (Outbound telemarketing): বিপণনকারী যখন নিজে আগ্রহী এবং উদ্যোগী হয়ে পণ্য বা সেবার বিক্রি বাড়ানোর জন্য টেলিফোনের মাধ্যমে ক্রেতার সাথে যোগাযোগ করে, তখন তাকে বহির্মুখী টেলিমার্কেটিং বলা হয়।
৩. বিলবোর্ড (Billboard): বিলবোর্ড হলো বড় ধরনের আউটডোর বিজ্ঞাপন কাঠামো, যা মূলত বিভিন্ন শহরের ব্যস্ত রাস্তার পাশে চোখে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হলো বিলবোর্ড। বিলবোর্ড মার্কেটিং বড় আকারের বিজ্ঞাপন বোর্ড ব্যবহার করে গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়। প্রিন্টেড অথবা হাতে আঁকা ছবি ব্যবহার করে এখনো এ ধরনের মার্কেটিং কার্যক্রম জনপ্রিয়।
৪. প্রিন্ট মিডিয়া মার্কেটিং (Print media marketing) : বিভিন্ন ধরনের সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, জার্নাল, মিডিয়া পাবলিকেশন্স প্রভৃতি প্রিন্ট মিডিয়া মার্কেটিং-এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, প্রিন্টেড কোনো কিছুর মাধ্যমে যখন ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়, তখন তাকে প্রিন্ট মিডিয়া মার্কেটিং বলে। এরূপ প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে খুব সহজে সম্ভাব্য গ্রাহকদের নিকট পৌঁছানো যায়।
৫. ব্রডকাস্টিং (Broadcasting) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধরন হলো ব্রডকাস্টিং। জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আরেকটি উপায় হলো রেডিও ও টেলিভিশনের মতো সম্প্রচারিত চ্যানেলের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করা। টেলিভিশন ও রেডিও এখন জনসাধারণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম।
৬. ক্যাটালগ মার্কেটিং (Catalog marketing) : ক্যাটালগ মার্কেটিং হলো পণ্যের মুদ্রিত ছবি, ভিডিও বা ডিজিটাল ক্যাটালগ, যা কোনো ক্রেতার কাছে দোকানে বা অনলাইনে প্রেরণ করা হয়। আরও সহজভাবে বলা যায়, যে পণ্যটি বিক্রেতা ক্রেতার কাছে বিক্রয় করবে তার ছবি, ভিডিও বা ডিজিটাল ছবি প্রেরণ করাকে ক্যাটালগ মার্কেটিং বলে। ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বদৌলতে ক্যাটালগগুলো দিনের পর দিন ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো অনলাইন আছে যেগুলো শুধু ক্যাটালগ মার্কেটিংয়ের জন্যেই ব্যবহার করা হয়। মুদ্রিত ক্যাটালগ এখন ওয়েবভিত্তিক ক্যাটালগ সৃষ্টি করছে।
ডিজিটাল ক্যাটালগের সুবিধা হলো এর খরচ কম। একই পণ্যের বিভিন্ন ধরনের ক্যাটালগ প্রেরণ করা যায়। অনলাইন ক্যাটালগে সময়ের উপযোগী দ্রব্যের দাম ও ছবির পরিবর্তন করা যায়। দ্রব্যের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল রেখে ছবির পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন করা যায়। ডিজিটাল ক্যাটালগের এত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কাগজ কালির মুদ্রিত ক্যাটালগ ক্রেতার মনের মধ্যে গেঁথে যায় এবং এমনভাবে ক্রেতাকে আকর্ষণ করে, যা সাধারণত অনলাইন ক্যাটালগ সৃষ্টি করে না।
৭. ফ্লায়ার্স ও ব্রোশরস (Flyers and brochures): ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর ধরনের মধ্যে এটি এক ধরনের বিশেষ পন্থা। এ পন্থায় সরাসরি গ্রাহকদের সাথে সাক্ষাৎ করা হয়। ব্রোশার ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করা হয় যাতে তারা পণ্য ক্রয় করে।
৮. মুখোমুখি বিক্রয় ( Face-to-face selling):
যে প্রক্রিয়ায় ক্রেতাসাধারণের নিকট সরাসরি তথা মুখোমুখি উপস্থিত হয়ে পণ্য এবং কোম্পানি বিষয়ক তথ্য উপস্থাপন করে বিক্রয়ের প্রচেষ্টা চালানো হয় তাকে মুখোমুখি বিক্রয় বলে। মুখোমুখি বিক্রয় পন্থায় মূলত নিম্নোক্ত দু'টি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যথা :
i. সরাসরি বিক্রয় (Direct selling);
ii. দ্বারে দ্বারে বিক্রয় (Door-to- Door selling).
অর্থাৎ, সরাসরি বিক্রয় এবং দ্বারে দ্বারে বিক্রয় পদ্ধতিই হলো মুখোমুখি বিক্রয় পন্থা। এ প্রসঙ্গে Pride and Ferrell তাদের "Marketing" বই-এ বলেন, "Direct selling is the marketing of products to ultimate consumers through face-to-face sales representation at home or in the workplace." অর্থাৎ, বাড়িতে অথবা কার্যক্ষেত্রে চূড়ান্ত ভোক্তাদের মুখোমুখি হয়ে বিক্রয়সংক্রান্ত বক্তব্য উপস্থাপন করে পণ্যের বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়াকে প্রত্যক্ষ বিক্রয় বলে ।
আমাদের দেশে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য বিক্রয় পদ্ধতি হলো ক্রেতাদের নিকট সরাসরি উপস্থিত হয়ে পণ্য বিক্রয়ের প্রচেষ্টা করা। এক্ষেত্রে বিক্রয়কর্মীরা ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পণ্য বিক্রয়ের প্রচেষ্টা চালায়। যেমন : ফেরিওয়ালা, স্বাস্থ্যকর্মী, বিমা প্রতিনিধি প্রভৃতি।
৯. ইভেন্ট মার্কেটিং (Event marketing):
ইভেন্ট মার্কেটিং বর্তমান সময়েও অত্যন্ত জনপ্রিয় মার্কেটিং পদ্ধতি বা কৌশল। ইভেন্ট মার্কেটিং-এর অন্তর্গত বিষয়গুলো হলো— মেলা, প্রদর্শনী, কনসার্ট, রোড-শো, ক্রীড়া ইভেন্ট ইত্যাদি। কারো সাহায্যের জন্য বা কারো জীবন বাঁচাতে অনেক শিল্পীরা এরূপ ইভেন্ট মার্কেটিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে। এক্ষেত্রে face to face ইন্টারেকশন হয়ে থাকে। ওপরে উল্লিখিত ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর বিভিন্ন ধরন ছাড়াও আরও কিছু ধরন রয়েছে। যেমন- রেফারেল, উইন্ডো ডিসপ্লে, কোল্ড কলিং ইত্যাদি।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে যে বাজারজাতকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় তাকে ই-মার্কেটিং বলে। অনেকেই আবার ই-মার্কেটিং-কে বিভিন্ন নামে অভিহিত করে থাকেন। যেমন- ডিজিটাল মার্কেটিং, ইন্টারনেট মার্কেটিং, অনলাইন মার্কেটিং এবং ওয়েব মার্কেটিং। নিচে ই-মার্কেটিং-এর বিভিন্ন ধরন তুলে ধরে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (Search engine optimization) :
অনলাইনে যেকোনো কিছু খুঁজে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। তুমি যে পণ্যটি খুঁজে পেতে চাচ্ছো তা যদি সার্চ রেজাল্টে এগিয়ে না থাকে তাহলে সে পণ্যটি মানুষের কাছে এখনো পরিচিতি লাভ করতে পারেনি। তাই সার্চ রেজাল্টে নিজের ওয়েবসাইট, পণ্য, সেবা বা ধারণা সবার সামনে বা ওপরে তুলে ধরার জন্য যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় তাকে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বলে। উল্লেখ্য যে, একটি ওয়েবসাইটে এর ভিউয়ার বা ভিজিটরের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এরূপ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন- SEO ব্যবহার করা হয়। বহুল পরিচিত ও ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে গুগল, ইয়াহু, বিং ইত্যাদি অন্যতম।
২. গুগল সার্চ নেটওয়ার্ক (Google search network): এটি হলো কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট বা অ্যাপসের সমষ্টি যেখানে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন বা অ্যাডস প্রচার করা হয়। এক্ষেত্রে যখন কোনো ইউজার বা ব্যবহারকারীর ব্যবহৃত সার্চ কী ওয়ার্ড তোমার কী ওয়ার্ডের সাথে মিলে যাবে, কেবল তখনই তার সার্চ রেজাল্টে তোমার অ্যাডস দেখানো হবে।
৩. কনটেন্ট মার্কেটিং (Content marketing) : ই- মার্কেটিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কন্টেন্ট মার্কেটিং। একটি বিজ্ঞাপনের সফলতা নির্ভর করে তার কন্টেন্ট তৈরির ওপর। উল্লেখ্য, যেকোনো ছবি, ভিডিও, লেখা, ইনফোগ্রাফি ইত্যাদি কন্টেন্টের অন্তর্ভুক্ত। কন্টেন্ট এমন হওয়া উচিত যেন ভিজিটর বার বার ভিজিটের জন্য প্রলুব্ধ হয়।
৪. ই-মেইল মার্কেটিং (E-mail marketing): ই-মেইল মার্কেটিং হলো এমন একটি অনলাইন মার্কেটিং প্রক্রিয়া যেখানে অনলাইন মেইলের মাধ্যমে কোনো পণ্য বা সেবার প্রচার করা হয়। অর্থাৎ, যখন কোনো বার্তা বা মেসেজ গ্রাহকদের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে পৌঁছানো হয়, তখন তাকে ই-মেইল মার্কেটিং বলে। এ ধরনের মার্কেটিং ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত ।
৫. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate marketing): অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো ই-মার্কেটিং-এর কৌশলগত পদ্ধতি। কেননা এক্ষেত্রে তিনটি পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যথা- (ক) পণ্যের মালিক, (খ) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার ও (গ) চূড়ান্ত ভোক্তা। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারগণ প্রথমে পণ্য পছন্দ করেন। তারপর ব্লগ, ভিডিও বা বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে মালিকের পক্ষে প্রচার করেন। তুমি যখন তোমার ই-মার্কেটিং-এর অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কমিশনভিত্তিক অন্য কারো পণ্য বা সেবার প্রচার করবে, তখন তা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হিসেবে বিবেচিত হবে।
৬. ভিডিও মার্কেটিং (Video marketing):
ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য, যেকোনো বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভালো কাজে বা উৎকৃষ্ট পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী করে তোলার জন্য ভিডিও মার্কেটিং-এর ভূমিকা অপরিসীম। এমনভাবে ভিডিও তৈরি করতে হবে যাতে ভিডিও দেখে দর্শকরা ক্রেতায় পরিণত হয়। গুগল অ্যাডওয়ার্ডসের মাধ্যমে সহজেই জানা যায় যে, কারা ভিডিও দেখছে, কখন দেখছে এবং কোথা থেকে দেখছে। অনেকেই বলে থাকে যে, একটি ছবির মূল্য হাজার শব্দের, আর একটি ভিডিওর মূল্য হাজার হাজার ছবির সমান।
আকর্ষণীয় ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে সহজেই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যায়। যদি সঠিক বার্তাটি ভিডিওর মাধ্যমে সঠিক গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যায় তখনই ভিডিও মার্কেটিং ফলপ্রসূ হয়। প্রচারের জন্য যেসব ভিডিও অ্যাডস ফরমেটগুলো রয়েছে তার মধ্যে Instream ads, video discovery ads, out- stream ads অন্যতম।
৭. মোবাইল মার্কেটিং (Mobile marketing): ই-মার্কেটিং - Mobile মারকেতিং
এর সবচেয়ে বহুল প্রচলিত একটি ধরন হলো মোবাইল মার্কেটিং। সাধারণ মানুষদের কাছে সহজে পৌঁছানোর এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় পন্থা হলো মোবাইল মার্কেটিং। এসএমএস (SMS) মার্কেটিং এমএমএস ( MMS ) মার্কেটিং, ব্লুটুথ মার্কেটিং, ইত্যাদি মোবাইল মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত। এসএমএস (SMS) মার্কেটিং অধিকতর কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে ইতোমধ্যে বিবেচিত হয়েছে। ডিজিটাল যুগের একজন সদস্য হিসেবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটারে তোমার অনেক ফলোয়ার থাকতে পারে। তাদেরকে মেসেজ করে পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করা যায়।
৮. ভাইরাল মার্কেটিং (Viral marketing): অনলাইন বিজনেসের সফলতার জন্য ভাইরাল মার্কেটিং-এর গুরুত্ব অপরিসীম। যেকোনো ছবি, ভিডিও বা লেখাকে ভাইরাল করতে আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। মনের মতো কন্টেন্ট হলো মানুষ নিজেই কন্টেন্টটি ছড়িয়ে দেয়। যারা ইউটিউব ব্যবহার করছেন তারা অনেকেই তাদের পণ্য বা সেবার ভিডিওর ভাইরাল করার পদ্ধতি আয়ত্ত করেছেন। ইউটিউবাররা বিশ্লেষণ করলেই জানতে পারেন যে, তাদের ভিডিওটা কেমন পারফর্ম করেছে, কত ঘণ্টার মধ্যে কতজন দেখেছে, কত মিনিট করে তাদের ভিডিওটা দেখেছে সবই জানতে পারেন।
৯. গুগল অ্যাডস (Google ads): ই-মার্কেটিং-এর আরেকটি ধরন হলো গুগল অ্যাডস। এটি হলো এক ধরনের বিশেষ অনলাইন বিজ্ঞাপন সেবা মাধ্যম। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত বিজ্ঞাপন অনলাইনে প্রচার করা হয়।
১০. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (Social media marketing) : ইন্টারনেট ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যে বাজারজাতকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয় তাকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলে। ব্যবসায়িক যেকোনো পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মতো উত্তম জায়গা আর কোথাও নেই। পুরো পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্ত। এরা নিয়মিতভাবে ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করছে। নিচে সংক্ষেপে এরূপ কয়েকটি ধরন উল্লেখ করা হলো-
ক. ফেসবুক মার্কেটিং (Facebook marketing): ফেসবুক পেইজ বা গ্রুপের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে, তাদেরকে ক্রেতায় পরিণত করাকে ফেসবুক মার্কেটিং বলে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সকল ফেসবুক ব্যবহারকারীদের এরূপ পেইজ বা গ্রুপ খোলার এবং তা সংরক্ষণের অনুমতি দেয়।
খ. টুইটার (Twitter Marketing): এটি হলো এক ধরনের মাইক্রো-ব্লগিং সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইট মার্কেটিং। যে কেউ তাদের মোবাইল বা ল্যাপটপ থেকে টুইটার ব্যবহার করতে পারেন। গ. ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং (Instagram Marketing): এটি এক ধরনের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক যেখানে বিভিন্ন ধরনের পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্ন পণ্য বা সেবার ছবি শেয়ারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন।
ঘ. অন্যান্য (Others) : এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং-এর যেসব পদ্ধতি রয়েছে তার মধ্যে পিন্টারেস্ট মার্কেটিং, লিংকডইন মার্কেটিং অন্যতম।
মার্কেটিং বা বাজারজাতকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো ক্রেতাদের জন্য ভ্যালু সৃষ্টি করে এবং ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ক্রেতাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে । মার্কেটিং-এর 4P বলতে মার্কেটিং মিক্স (Marketing Mix)-এর চারটি প্রধান উপাদানকে বোঝানো হয়েছে। নিচে মার্কেটিং মিক্স বা বাজারজাতকরণ মিশ্রণ ও এর প্রধান চারটি উপাদানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো—
‘বিপণন মিশ্রণ' শব্দটি নেইল এইচ. বোর্ডেন ১৯৫০ সালে সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। আমেরিকার 'Journal of Marketing Research -এ বিষয়টি প্রকাশিত হলে ক্রমেই এর জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, বিপণন মিশ্রণ হলো একসেট উপাদানের সংমিশ্রণ যেগুলো ক্রেতাসাধারণের প্রয়োজন ও অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। বিপণন মিশ্রণের উপাদানগুলো হচ্ছে পণ্য ( Product), মূল্য ( Price), স্থান (Place) এবং প্রসার ( Promotion)। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই মোড়কিকরণকে (Packaging) বিপণন মিশ্রণের আরেকটি উপাদান হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি তা নয় । কেননা 'Packaging is just one of many product decisions.' অর্থাৎ প্যাকেজিং হলো পণ্য বিষয়ক অনেক সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি বিষয়। আর এগুলোর পাশাপাশি বিপণনে নতুন 4Ps বর্তমানে সংযুক্ত হয়েছে। সেগুলো হলো (People, process, program, performance) এই উপাদানগুলোও বিপণন কর্মসূচিতে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
মৌলিক অর্থে, বিপণন মিশ্রণ হচ্ছে কতগুলো নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং কৌশলগত উপাদানের সমষ্টি; যথা : পণ্য, মূল্য, স্থান এবং প্রসার। উল্লেখ্য যে, প্রতিষ্ঠান এসব উপাদানের মাধ্যমে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে বিপণন কর্মসূচি হাতে নেয় ।
জেনে রাখো নিচে বিশেষজ্ঞদের মতামত দেওয়া হলো- Philip Kotler Gary Armstrong-43, "Marketing mix is the set of tactical marketing tools-product, price, place and promotion that the firm blends to produce the response it wants in the target market " অর্থাৎ, "বিপণন মিশ্রণ হচ্ছে কৌশলগত বিপণন হাতিয়ার— পণ্য, মূল্য, স্থান ও প্রসারের সেট, যা কোনো প্রতিষ্ঠান অভীষ্ট বাজারে প্রত্যাশিত সাড়া সৃষ্টির জন্য সংমিশ্রণ করে।” McCarthy Petteault 4, "Marketing Mix is the controllable variables that the company puts together to satisfy a target group" অর্থাৎ, “বিপণন মিশ্রণ হচ্ছে নিয়ন্ত্রণযোগ্য চলকসমূহ যা কোম্পানি অভীষ্ট দলের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একত্রে প্রয়োগ করে।” Stanton, Etzel Walker-, "Marketing Mix is the combination of a product, how it is distributed and promoted and its price " অর্থাৎ, "পণ্য, পণ্যের বন্টন, প্রসার এবং মূল্য নির্ধারণের সমন্বয়কে বিপণন মিশ্রণ বলে।” |
---|
উপরের সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করলে বিপণন মিশ্রণের যেসব বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় সেগুলো নিম্নরূপ—
• বিপণন মিশ্রণ হচ্ছে চারটি উপাদানের (পণ্য, মূল্য, স্থান ও প্রসার) সমন্বয়;
• বিপণন মিশ্রণের উপাদানগুলো নিয়ন্ত্রণযোগ্য;
• ক্রেতাসাধারণকে কেন্দ্র করে বিপণন মিশ্রণ কৌশল উন্নয়ন করা হয়;
• বিপণন মিশ্রণের উপাদানগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে ক্রেতাদের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা চালানো হয়। অতএব, বিপণন মিশ্রণ হচ্ছে চারটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য উপাদানের (পণ্য, মূল্য, স্থান ও প্রসার) সমষ্টি যেগুলোর মাধ্যমে ক্রেতাসাধারণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি বিধান এবং প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জন সহজতর হয়।
বিপণন মিশ্রণ হচ্ছে কতগুলো নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং কৌশলগত উপাদানের সমষ্টি; যথা : পণ্য, মূল্য, স্থান এবং প্রসার। নিচের চিত্রে বিপণন মিশ্রণের উপাদানগুলো উল্লেখ করে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. পণ্য ( Product ) : পণ্য হচ্ছে এমন কিছু, যার মাধ্যমে ক্রেতার প্রয়োজন মেটানো যায়। অর্থাৎ, যে জিনিসের মাধ্যমে ক্রেতার সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান সম্ভব হয় তাকে এক কথায় পণ্য বলে। এ প্রসঙ্গে Philip Kotler 4 Gary Aromstorng, "Product means the goods and services combination that the company offers to the target market" "পণ্য হলো দ্রব্য ও সেবার সমষ্টি, যা কোনো প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যস্থিত বাজারে উপস্থাপন করে।”
২. মূল্য (Price) : মূল্য ক্রেতাসাধারণের কাছে অত্যন্ত সংবেদনশীল (Sensitive) বিষয়। এ প্রসঙ্গে Philip Kotler এবং Gary Armstrong, "Price is the amount of money customers must pay to obtain the product. " অর্থাৎ পণ্য পাওয়ার জন্য ক্রেতাদের আবশ্যিকভাবে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয় তাই মূল্য। মূল্য বেশি হওয়ার কারণে অনেক ক্রেতাই সে পণ্য কিনতে আপত্তি পোষণ করে। আবার, মূল্য কম হলে পণ্যের গুণাগুণ কম ভেবে সে পণ্য কেনার ক্ষেত্রেও অনিচ্ছা পোষণ করে। তাই সবদিক বিচার বিশ্লেষণ করে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করতে হয়।
৩. স্থান (Place) : ক্রেতারা সহজে যে সুবিধাজনক অবস্থান থেকে পণ্য কিনতে পারে তাকেই এক কথায় স্থান বলে। অর্থাৎ ক্রেতাসাধারণ যখন, যেখানে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে চায় সেখানে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার নামই হলো Place বা স্থান। স্থান প্রসঙ্গে Philip Kotler 4 Gary Armstrong, "Place includes company activities that make the product available to target consumers." "পণ্যকে টার্গেট ভোক্তাদের কাছে সহজলভ্য করার জন্য কোম্পানির কার্যাবলি স্থানের অন্তর্ভুক্ত”।
8. প্রসার (Promotion): সাধারণ অর্থে, পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর জন্য যাবতীয় কৌশলই হলো প্রসার। এ প্রসঙ্গে Philip Kotler & Gary Armstrong বলেন "Promotion means activities that communicate the merits of the product and persuade target customers to buy it." “প্রসার হচ্ছে ঐ সব কাজ যেগুলোর মাধ্যমে অভীষ্ট ক্রেতাদের পণ্যের উপকারিতা জানানো হয় এবং পণ্য কিনতে উৎসাহিত করা হয়।
মার্কেটিং বা বাজারজাতকরণে 5Cs বিশ্লেষণ হলো একটি জনপ্রিয় মডেল। 5Cs মার্কেটিং সাধারণত মার্কেটারদের ব্যবসায়ের সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করে থাকে। এখানে 5Cs বলতে Customers, Company Competitors, Collaborators এবং Context কে বোঝানো হয়েছে। নিচে এরূপ 5Cs সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. ক্রেতা (Customers): এক্ষেত্রে সম্ভাব্য ক্রেতাদের প্রয়োজন, অভাব, চাহিদা, বৈশিষ্ট্য, ক্রয়ক্ষমতা, ক্রয় অভ্যাস ইতাদি বিশ্লেষণ করতে হয়। ক্রেতা বলতে ঐ সকল সম্ভাব্য গ্রাহকদেরকে বোঝায় যারা পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহী বা পণ্য ক্রয় করছে। ক্রেতারা ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
২. কোম্পানি (Company) : সাধারণ ভাষায়, কোম্পানি হলো এক ধরনের সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান, যেখানে কয়েকজন সদস্যের সম্মিলিত প্রয়োগে আইনগত এবং বৈধ উপায়ে পণ্য উৎপাদন ও মার্কেটিং কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। বিভিন্ন বিভাগের সহায়তায় কোম্পানির কার্যক্রম সম্পাদিত হয়ে থাকে। যেমন- ক্রয় বিভাগ, বিক্রয় বিভাগ, হিসাব বিভাগ প্রভৃতি। কোম্পানির সার্বিক অবস্থা জানার জন্য SWOT বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জরুরি। ক্রেতাদের প্রয়োজন বা চাহিদা পূরণে কোম্পানির কেমন সামর্থ্য রয়েছে তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ ।
৩. প্রতিযোগী (Competitors): বর্তমান ও সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের শক্তি ও দুর্বলতাসমূহ বিশ্লেষণ করতে হবে। একই ধরনের পণ্য বা সেবা বাজারজাতকরণকারী সব প্রতিষ্ঠানই একে অন্যের প্রতিযোগী। প্রতিযোগীদের ব্যবসা নিজের ব্যবসায়ের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রতিনিয়তই রাখতে হয়। ই- মার্কেটিং-এ যারা প্রতিযোগী রয়েছে তাদের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করেই ব্যবসায়ীকে এগিয়ে যেতে হবে ।
৪. সহযোগী (Collaborators) : সম্ভাব্য ডিস্ট্রিবিউটর, সাপ্লায়ার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী অথবা যেকোনো পার্টি সহযোগী হিসেবে বিবেচিত। ই-মার্কেটিং-এর ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৫. কনটেক্সট বা ক্লাইমেট (Context or climate): ই-মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে পরিবেশ পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করতে হয়। যেমন- রাজনৈতিক ইস্যু, (ট্রেড রেগুলেশন, কর, শ্রম আইন ইত্যাদি), অর্থনৈতিক ইস্যু (শ্রম মূল্য, প্রবৃদ্ধির হার), সামাজিক ইস্যু (শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক বিষয়) এবং প্রযুক্তিগত ইস্যু ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করতে হয়। একটি ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই PESTEL বিশ্লেষণ করতে হয়, যা নিচের চিত্রে তুলে ধরা হলো-
ই-মার্কেটিং হলো বর্তমান সময়ের বহুল প্রচলিত ও সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটিং। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের জন্য প্ররোচনা বা উৎসাহ দেওয়ার অনন্য কৌশলের নাম হলো ই-মার্কেটিং।
অন্যদিকে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং বলতে পৌরাণিক বিভিন্ন মাধ্যম তথা রেডিও, টেলিভিশন, ম্যাগাজিন ইত্যাদির মাধ্যমে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের প্রক্রিয়াকে বোঝায়।
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং | ই-মার্কেটিং | |
---|---|---|
১ | ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য প্রচলিত | পদ্ধতি ব্যবহার করা। যেমন- প্রিন্ট মার্কেটিং, ওয়ান-টু-ওয়ান মার্কেটিং ইত্যাদি। | ইলেকট্রনিক মিডিয়া,সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ক্রেতাদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া হলো ই-মার্কেটিং। |
২ | একমুখী যোগাযোগ | দ্বিমুখী যোগাযোগ। |
৩ | খুবই কম। | এক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার ইন্টারেকশন খুবই |
৪ | খরচ বেশি। | তুলনামূলকভাবে খরচ কম। |
৫ | এক্ষেত্রে পরিমাপ করা সহজ নয়। | বিভিন্ন এনালাইটিক্স টুলস এর মাধ্যমে এর বিস্তারিত পরিমাপ করা যায়। |
৬ | ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এ দর্শক বা গ্রাহকদের | সংখ্যা কম। | ই-মার্কেটিং-এর দর্শক বা গ্রাহকের সংখ্যা বেশি। |
৭ | এক্ষেত্রে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে বিলম্ব হয়। | ই-মার্কেটিং-এ যখন-তখন অল্প সময়ে তথ্য বেশি বিশ্লেষণ করা যায়। |
৮ | ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে সম্পৃক্ততা কম। | ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে সম্পৃক্ততা বেশি। |
৯ | এক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারণ করা কঠিন। | ই-মার্কেটিং-এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা সহজ। |
১০ | রেডিও, টেলিভিশন, বিলবোর্ড, টেলিফোন কল, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ইত্যাদি। | সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, কন্টেন্ট মার্কেটিং,অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ইত্যাদি। |
আরও দেখুন...